উত্তরদিনাজপুর

দেখুন কি করল এই ব্যাক্তি যার জন্য এলাকার মানুষ তার নাম দিল গাছ পাগলা

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের যোগীপুকুর গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ সরকার। জীবনের অনেকটা বছর নীরবে নিভৃতে বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগিয়েছেন নারায়ণ সরকার। তিনি ওই এলাকায় "গাছ পাগলা" বলেই পরিচিত। তার কাজের ধরন শুনলে অনেকেই চমকে যাবেন। লোকটার নেশা রাস্তার ধারে ধারে গাছ লাগানো। ষাটোর্ধ নারায়ণ বাবু বিনা পারিশ্রমিকে ২০ বছর বয়স থেকে গাছ লাগিয়ে চলেছেন কোন স্বার্থ ছারায়। এখন পর্যন্ত তার হাতে দের লক্ষের বেশী চারা গাছ রোপণ হয়েছে। এর মধ্যে জাম, কাঁঠাল, লিচু ছাড়াও বট, কদম সহ নানা প্রকারের গাছ রয়েছে। ক্লাস থ্রি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন। কথায় বলে, দু এক জন ভালো মানুষের জন্য আমরা শ্বাস নিতে পারি। আর তাই এলাকা আজ সবুজে ভরে গেছে। পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন কৃষিজীবী। তিনি বলেন, ২০ বছর বয়স থেকে সে রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর কাজ করে আসছে, তবে তার জন্য সে কারও কাছ থেকে কোন পারিশ্রমিক নেয় না। আমার হাতে লাগানো অনেক গাছ এখনো রাস্তার ধারে রয়েছে। বিসেস করে মনোহরপুর থেকে যোগীপুকুর যাওয়ার ৫ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে যত গাছ রয়েছে সবই আমার হাতে লাগানো বলে তিনি জানান। এছাড়াও আশেপাশের মনোহরপুর, রামকৃষ্ণপুর সহ বালাস সংসদ এলাকায় অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশী গাছ লাগান তিনি। এগুলির মধ্যে অনেক গাছ এখনও বেঁচে রয়েছে অনেক গুলি আবার দুস্কৃতিরা কেটে নিয়ে গেছে। কিন্ত তার কাজ সে করে যাচ্ছে। তিনি বলেন কোন কোন সময় চোখের সামনে গাছ কাটতে দেখলে আমি  আর স্থির থাকতে পারি না। তাদের সঙ্গে অনেক সময় আমার ঝগড়াও হয়ে যায়। কখনো কখনো ভাবি কেন ? কার জন্য আমি গাছ লাগাচ্ছি ? আবার সব ভূলে নিজের তাগিদে রাস্তার ধারে গাছ লাগাতে থাকি। আমি চাই আগামী প্রজন্ম যেন সুস্থ সবল ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। শুধু নিজেই গাছ থেকে কলম করে হাজারের উপর চারা বানানো যায়। ফলে একটি গাছ থেকে সৃষ্টি হয়অনেক প্রাণ। গাছ লাগানোর পর সাইকেলে চেপে বালতি করে সেই গাছের গোঁড়ায় জল ঢালে। আশেপাশের গবাদি পশু যাতে সেই গাছ না খায়, সে জন্য বেড়া দেন তিনি, গাছ পরে গেলে বাঁশের লাঠির সাহায্যে গাছগুলিকে বাধা হয়। তিনি গাছগুলিকে নিজের সন্তানের মত সেবা করেন।

 

            নারায়ণ বাবুর স্ত্রী অরুনা দেবী বলেন, বিয়ের পর থেকেই দেখছি ও কৃষিকাজ সেরে চলে যায় রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর কাজে। ওর এটা নেশা ভালো কাজ করছে তাই কোনদিন বাধা দিইনি। এমনকি আমিও তার এই কাজে তাকে সাহায্য করি।সবই ভালো তবে গাছ লাগানোর সময় অনেক দূর থেকে জল আনতে হয় সেটা কিছুটা হলেও কষ্টকর হয়ে ওঠে।

            গ্রামের এক বাসিন্দা পরিমল সরকার বলেন তিনি বহু দিন ধরে হাজার হাজার গাছ লাগাছেন। তার এই কাজে খুশি সকলেই।

            কালিয়াগঞ্জ বিডিও মহম্মদ জাকারিয়া বলেন, নারায়ণ সরকার সমাজের জন্য উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করছি ওনাকে এন আর জি এস প্রকল্পে যুক্ত করার, যাতে তিনি এই কাজের জন্য কিছু পারিশ্রমিক পান। এবং ওনার জন্য ভাতার ব্যাবস্থা করার কথাও তিনি বলেন। নারায়ণ সরকারের দাবি তিনি রাস্তার ধারে যে সমস্ত গাছ গুলি লাগাচ্ছেন তা অনেক সময় অনেকে কেটে নিচ্ছেন। তার জন্য প্রশাসনের কাছে তার দাবি এর জন্য যেন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হক। বিডিও মহম্মদ জাকারিয়া বলেন আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি যদি তেমন কিছু ঘটে তবে তার বিরুদ্ধে করা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।